কল্পনায় কল্পিত বাস্তবতার তুমি | জোবায়ের আহমেদ নয়ন

ঘুরে ঘুরে আরো একটি বছর চলে গেল। কিন্তু এখনো ভূলতে পারলাম না। তবে আগে
থেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। কথায় আছে, যে জিনিস পাওয়ার নয় সে জিনিসের
জন্য আসায় থেকে কি লাভ! তাই আশা ও নেই ভালবাসা ও নেই। তবে মিস করি।
আরো বেশি মিস করি তার স্বভাবটাকে। যেটা দেখেই তাকে খুব বেশি ভালো লেগেছিল।
মেয়েটার নাম ছিল রিয়া। কাকতালিয় হলেও আমি রিয়া নাম টাকে আগে থেকেই পছন্দ
করাতাম। মানুষের কিছু পছন্দের নিক নাম থাকে । আমারো ছিল। যেমন রিয়া, অনু
ইত্যাদি। পছন্দের মেয়েটার নাম যদি পছন্দের নামের হয় তাহলে কোন কথাই নেই।
আমার ও তাই হয়েছিল।
সময়টা ছিল এসএসসি এর পর। তখন আমি একজন কম্পিউটার শিক্ষক। এসএসসি
এর পর কম্পিউটার ক্লাসে রিয়ার সাথে আরও পাঁচ/ছয় জন মেয়ে ভর্তি হয়েছিল।
ওদের নিয়েইে একটি ব্যাচ হল। সবার মত ওদেরকেও ক্লাস করাচ্ছিলাম। কয়েকদিন
যাওয়ার পর রিয়াকে একটু খেয়াল করলাম। যদিও খেয়াল করার কয়েকটা কারন
আছে। ও চশমা পরতো, চুপচাপ থাকতো আর নিচের দিক তাকিয়ে থাকতো। মানে
এদিক সেদিক খুব কম তাকাত। প্রশ্ন করলেও সহজে উত্তর দিত না। এ জন্যই
সবার মধ্যে ওরে একটু আলাদা ভাবে দেখা। সময়ের সাথে সাথে ওর স্বভাবগুলো
আরো স্পষ্ট হতে লাগলো। আর যতই স্পষ্ট হতে লাগলো ঠিক ততই ওকে ভাল লাগা
শুরু হলো। ঠিক এভাবে চলে গেল তিনটি মাস। আর এ তিন মাসে ওদের কোর্স শেষ হয়ে
গেল এবং ক্লাসে আসাও বন্ধ হয়ে গেল। তাই ভালো লাগাটা মনে হয় সীমাবদ্ধ হয়ে
গেল।
হঠাৎ দেখি একদিন ও এবং ফিমা এসে বললো, ভাইয়া আমরা কি প্র্যাক্টিস করতে
আসতে পারি ? তখন আমি বললাম কেন নয়, যে কোন সময় আসতে পার। ফিমার কথা
ত বলিনি। ফিমা ছিল অন্য ব্যাচে। ফিমা আর রিয়া খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু ফিমা আর
রিয়া সম্পূর্ন আলাদা দুই টা চরিত্র। রিয়া যেমন চুপচাপ ফিমা ছিল তার উল্টোটা। মানে
চঞ্চল। তবে ফ্রেশ মনের অধিকারী। যা ভাল মনে হবে তাই বলে দেবে। আর কথার
সময় তো কোন ছাড়াছাড়ি নেই। এই হলো ফিমা আর রিয়া। কাকতালীয় হলেও ওরা খুব
ভাল বন্ধু। ফিমা আগে থেকেই আমারও ভাল বন্ধু।
কলেজের ফাঁকে ওরা যখন সময় পেত ঠিক তখনি প্র্যাক্টিস করতে চলে আসতো। তাই
আমারও আবার নতুন করে দেখার সুযোগ হয়ে গেল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট
আগের থেকে একটু ভিন্ন। আগেতো রিয়া কথাই বলতো না। আর এখন একটু একটু
কথা বলে। যে কোন প্রশ্ন করলেও উত্তর দেয়। মাঝে মাঝে দেখি ও আমাকেও
অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করে। কিন্ত মজার ব্যাপার হলো ও আমার দিকে তাকিয়ে কথা
বলে না। সব সময় ও নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। একদিন যখন আমি ওর দিকে
তাকিয়ে কথা বলি, ঠিক তখনি ও আমাকেও নিচের দিক তাকিয়ে কথা বলতে বলে। কি
মেয়েরে বাবা তাকিয়ে কথাও বলা যাবে না !!! ঠিক এভাবে কথা বলতে বলতে আমি
ওকে পছন্দ করে ফেলি। আমি বিষয় টা ফিমাকে জানাই। ফিমা তখন বলল ভাইয়া
আপনি যে ওকে পছন্দ করেন সেটা রিয়া জানে। আমি ত তখন কিছুটা অবাক
হয়েছিলাম। তারপর ফিমাকে বলি আমাকে এ ব্যাপারে একটু সহযোগীতা করতে।
ফিমাও আমকে সহযোগীতা করতে থাকে। ওর ভাল লাগা এবং পছন্দের বিষয়গুলো
আমাকে বলতে থাকে। এক পর্যয়ে ফিমাকে আমার ব্যাপারে রিয়ার কাছে বলতে বলি।
তাও আবার ফিমার মত করে। উত্তর টা সম্পূর্ণ নেগেটিভ হলেও একটি পজেটিভ
উত্তর পেয়েছিলাম। সেটা হল সে আমাকে পছন্দ করে একজন মানুষ হিসেবে। সম্পূর্ণ
নেগেটিভ হলেও এ কথাটা শুনে আমার খুব ভালই লেগেছিল। ও বলেছিল কোন রকম
সম্পর্কে (প্রেমে) জরাবে না। ওর বাবা মা যাকে ঠিক করবে তাকেই বিয়ে করবে। এ
কথা শুনার পর আমি আবার ফিমা কে আমার ব্যাপার বলতে বলি। যখন ফিমা আমার










ব্যাপারে বলতো তখন রিয়া খুব রেগে যেত। এ কথা শুনে আমি খুব বিচলিত হলাম আর
ওর আশা ছেড়ে দিলাম। তবে কিছু কিছু সৃতিগুলো মনে হলে মন চায় একবার একটু
সামনে গিয়ে দাড়াই। মনের কথাগুলো সাহস করে বলে ফেলি। কিন্তু ফিমার কথাগুলো
যে আমায় মনে করিয়ে দেয়। সেই কারনে আর সামনা সামনি হতেও পারিনি আর
বলতেও পারিনি। তবে মাঝে মাঝে ও আমার দিকে পিছন ফিরে তাকাতো। একদিন
একটি গেট এর সামনে দিয়ে যখন ও গিয়েছিল তখন আমি ভাল করে খেয়াল করতে
পারিনি। যখন গেট এর কাছে যেয়ে দেখি তখন বুঝতে পারি এটা ও। কিছুক্ষন যখন
তাকিয়ে রইলাম ঠিক তখনি ও পিছন ফিরে তাকালো। খানিক টা লজ্জা পেয়ে আমিও
চলে গেলাম। সকাল বেলা যখন ফুটবল খেলি তখন ও প্রাইভেট পরতে যেত। ও যখন
যেত আমি দাড়িয়ে শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। যদি রিয়া আমার দিকে একটু
তাকায়। কিন্তু কে তাকায় কার দিকে! পরে যখন ফিমার সাথে কথা বলি তখন বুঝতে
পারি ও নাকি আমাকেও দেখেছে। মেয়েরা কখন ছেলেদের দিকে তাকায় সেটা বুঝাও
মুশকিল। তবে একটা ব্যাপার ভাল লাগে যে, মাঝে মাঝে সামনে পরে গেলে একটা লম্বা
সালাম দিবে আর বলবে ভাইয়া কেমন আছেন। তখন আমি ঠিক ওর মুখের অপলক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। কারন ও যখন আমার সাথে কোন কথা বলে তখন ছোট
করে একটু মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলে। আর ঐ মুচকি হাসি দেখে আমি পাগল হয়ে
যেতাম।
আর এভাবেই আশাবিহীন মানুষটার জন্য কল্পনায় ডুবে থাকতাম দিনের পর দিন
রাতের পর রাত…..


জোবায়ের আহমেদ নয়ন

Popular posts from this blog

গণঅভ্যুত্থানের পর জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক ভণ্ডামি

Privacy Policy For Blogger

All About TSLBD Blog and Its Owner Azharul Islam Sarker (Orthy)