একটি গিটার এবং একটি ইউটিউব চ্যানেলের গল্প!
একটি আধুনিক গল্প বলি আপনাদের? বাংলাদেশে এক সময় একটি সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল। গল্পের সময়ে সে ইন্টার লেভেলে ঢাকার একটি বিখ্যাত কলেজে পড়াশুনা করতো। সময়টা তখন ২০১১ সাল। পড়ালেখার পাশাপাশি ছেলেটি প্রায় প্রতিদিনই তার বন্ধুদের সাথে ঢাকার ধানমন্ডি লেকে গিটার নিয়ে গান গাইতো এবং আড্ডা দিতো। হঠাৎ একদিন তার মনে হলো যে তার গিটার শেখা উচিত। আর গিটার শিখতে হলে তো পরিচর্যা করার জন্য নিজের গিটার থাকতে হবে। এই মনে করে শখ করে সে তার বাসা থেকে দেওয়া হাত খরচ থেকে টাকা জমিয়ে রাখতো একটি গিটার কেনার জন্য। প্রায় দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে অবশেষে প্রায় ৬ হাজার টাকা দিয়ে সে তার স্বপ্নের গিটারটা কিনেই ফেললো। এবার শিখবার পালা। সে তার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে গিটার শেখা শুরু করলো। প্রায় একমাস সে গিটারের ক্লাস করলো। এরপর তার কলেজে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে সে আর কন্টিনিউ করতে পারলো না। টেস্ট পরীক্ষা শেষে এইচ এস সি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে বলা হলো তাকে। এভাবে মানুষ তাকে শুধু পড়াশুনা করতে বলা শুরু করলো এবং তাকে প্রেসার দেওয়া শুরু করলো। মানুষ বা সমাজ কী ভাববে এই চিন্তা করে আর এই ভয়ে সে আর গিটারের দিকে মনযোগ বসাতে পারলো না। অধরাই থেকে গেলো সেই ছেলেটির সাথে গিটার এবং গানের গল্প।
- মানুষ প্রথমবার গিটার কেন কিনে জানেন? বাজানোর জন্য? না! শখে এবং নিজের ইচ্ছায়। যেটা টাকা দিয়েও মেটানো সম্ভব নয়।
সেই ছেলেটিই কয়েক বছর পর আবার শখ করে ২০১৪ সালে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলে। ভাল কোন ক্যামেরা ছাড়াই নিজের মোবাইল দিয়ে সে ভিডিও বানাতে শুরু করে। সৌভাগ্যবশত সেই ইউটিউব চ্যানেলটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং সে এটা থেকে জীবনে প্রথমবারের মত টাকা উপার্জন করা শুরু করে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৬ হাজার টাকা সে ইনকাম করে। কিন্তু এবারও তার বড়রা তাকে শুধুমাত্র ভার্সিটির পড়াশুনা করার জন্য অতিরিক্ত তাগিদ দিতে থাকে। সবার এরকম আচরনে এবং এতকিছু বলার কারনে সে এক সময় জেদ করে এই ইউটিউব চ্যানেলটিও ডিলিট করে ফেলে।
- একটি ইউটিউব চ্যানেল ভাইরাল করে সেটা থেকে টাকা উপার্জন করা এতটা সহজ কাজ নয়। আপনি চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে সেই ছেলেটি কি তার নিজের জীবন যাপন করছে নাকি সমাজের তথাকথিত ওইসব শিক্ষিত মানুষদের কথার উপর ভর করে আছে? এমন জীবন রেখে কী লাভ যদি নিজের একটি ইচ্ছা বা শখও অন্য মানুষের কথার জন্য পূরণ করা যাবে না? জীবনে বেঁচে থাকার সার্থকতাটা কোথায় তাহলে? আমরা নিজে বাঁচছি নাকি অন্য মানুষের উপর ভর করে বেঁচে আছি? এটাই কী স্বাধীনতা?