সকল নারীকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
অনেকেই আজ সারাদিন নারী দিবস নিয়ে ট্রল করে বেড়াবেন। অনেকেই প্রশ্ন করে বেড়াবেন নারীর দিবসের প্রয়োজনীয়তা কী? অনেকেই বলে বেড়াবেন নারী নিজেকে মানুষ ভাবতে পারলো না বলেই এসব নারী দিবসের জন্ম।
জি, আপনাদের জন্যই আমার অল্প কয়টা কথা বলার আছে...
আগে এই দিবসটার নাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবি নারী দিবস। পরবর্তীতে শুধুমাত্র কর্মজীবি নারী নয়, সকল নারীদের অধিকার সচেতনতার প্রতীক হিসেবে এই দিবস পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে। অন্য মহান দিবসগুলোর মতো এই দিবসেরও রয়েছে মাহাত্ম্যপূর্ণ ইতিহাস।
১৮৫৭ সালে সংগঠিত হওয়া নারী শ্রমিকদের প্রথম সংঘবদ্ধ আন্দোলন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বৈষম্য, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্টকরণের দাবীতে, যে আন্দোলনে ন্যাক্কারজনকভাবে লাঠিচার্জ ও নিপীড়ন চালানো হয় সে দিবসকে স্মরণ করতেই প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসা হচ্ছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন সতেরোটি দেশ থেকে যোগ দেয়া একশো জন নারী প্রতিনিধি একত্রে প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।
বহু বছর ধরে হয়ে আসা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই দিবস পালন মূলত সিস্টেমকে বুঝিয়ে দেয়া যে আবারও যদি কোনো অন্যায় হয় আমাদের সাথে ঠিক সেভাবেই নিপীড়িত নারীরা একযোগে আন্দোলনে নামতে পারার মতো ঐক্যবদ্ধ।
নারী দিবস ব্যাপারটা প্রতীকী, অন্য দিবসগুলোর মতোই একটি বিশেষ ঐতিহাসিক মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনকে স্মরণ করে নিজেদের অধিকার সচেতন হওয়াই এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।
নারী দিবস মূলত সিস্টেমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার একটি উজ্জ্বল প্রতীক যা উদযাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ এখনো যুদ্ধবিগ্রহ হলে কিংবা অন্য যেকোনো সময়েও বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই নারীরা নিপীড়িত হচ্ছে, নারীরা এখনো সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আদায়ে পুরোপুরি সক্ষম হয় নি।
আড়ম্বরপূর্ণ উদযাপনের চেয়েও জরুরি হলো নারী দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে নারীদের মানসিক সচেতনতা।
আড়ম্বরপূর্ণ উদযাপনের চেয়েও জরুরি হলো নারী দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে নারীদের মানসিক সচেতনতা।
অনেকে এখন নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা কী জাতীয় গালভরা যেসব কথাবার্তা বলছে তারা মূলত ভুলে যাচ্ছে নিকট অতীতের সেই সংগ্রামী নারীদের যাদের সাহস ও প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে তারা বর্তমানে কিছুটা হলেও ন্যায্য অধিকার ভোগ করছে। এই দিবস নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে সেই সংগ্রামী নারীদের ত্যাগ ও সাহসের গল্পকে ভুলে যাওয়া৷ নারীদের এতটা অকৃতজ্ঞ হওয়া একদমই উচিত হবে না।
মনে রাখতে হবে নারীর প্রতি বৈষম্যের ছিঁটেফোঁটাও যদি কোনোদিন পৃথিবীতে না থাকে, সেদিনও নারী দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে না। কারণ এই দিবস এসব দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসের ধারক ও বাহক যা সবসময় সংগ্রামী নারীদের মহিমান্বিত সাহসিকতার গল্প আমাদের কানে কানে বলে যাবে, দেবে অনুপ্রেরণা নিজের অধিকার আদায় করে নেয়ার। আজ এই দিনে সকল সংগ্রামী নারীদের স্মৃতিকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
- আরও দেখুন...
Comments
Post a Comment